ঘরেই তৈরি করুন মশা তাড়ানোর ঔষধ।
বর্ষার এ সময়ে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে যায়। এ ছাড়াও মশা অনেক রোগ ছড়ায়। তাই মশার উপদ্রব থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য দিনে বা রাতে ঘুমানোর সময় মশারি টাঙানোর পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।
তবে সবসময় তো আর মশারির মধ্যে থাকা সম্ভব হয় না। অন্যদিকে ঘর থেকে মশা তাড়ানোও বেশ কষ্টকর।
যদিও এখন রেপিলেন্ট বা মশা তাড়ানোর ওষুধ কিনতে পাওয়া যায়। তবে বাজার চলতি এসব রেপিলেন্টের বদলে আপনি নিজেই ঘরে মশা তাড়ানোর ওষুধ বানিয়ে নিতে পারেন।
কীভাবে তৈরি করবেন জেনে নিন-
এক কাপ পানিতে ১০ ফোঁটা ল্যাভেন্ডার অয়েল, ৪-৫ ফোঁটা ভ্যানিলা এক্সট্র্যাক্ট এবং ৪ ফোঁটা পাতি লেবুর রস মিশিয়ে ভালো করে নেড়ে নিন। এবার মিশ্রণটি একটা স্প্রে বোতলে নিয়ে ভালো করে হাতে এবং পায়ে স্প্রে করুন!
৩০ মি.লি. নারকেল তেলের সঙ্গে ১৫ ফোঁটা পিপারমেন্ট তেল মিশিয়ে মিশ্রণ তৈরি করে নিন। এই মিশ্রণটি সারা শরীরে লাগালেই মশার উপদ্রব থেকে নিস্তার মিলবে নিমেষেই।
৩০ মি.লি. নারকেল তেলের সঙ্গে ১০-১৫ ফোঁটা টি ট্রি অয়েল মিশিয়ে নিন। এবার মিশ্রণটি সারা শরীরে মেখে নিন। দেখবেন একটি মশাও আপনার কাছে ঘেঁষবে না।
মশা-মাছি কিংবা পোকামাকড়দের দূরে রাখতে নিমের তেল বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এজন্য ৩০ মি.লি. নারকেল তেলের সঙ্গে ১০-১২ ফোঁটা নিম তেলে মিশিয়ে সারা শরীরে লাগিয়ে নিন।
৩ চামচ আমন্ড তেল কিংবা অলিভ অয়েলের সঙ্গে কয়েক ফোঁটা এসেনশিয়াল অয়েল মিশিয়ে নিন। মিশ্রণটি একটি স্প্রে বোতলে নিয়ে সকালে দু’বার এবং রাতে ঘুমানোর সময় ব্যবহার করলেই মশা ধারে কাছে আসবে না।
জেনে নিন, মশা তাড়ানোর অন্যান্য কার্যকরী উপায়:-
আগেকার যুগে মশার কয়েল, স্প্রে তো কিছুই ছিল না। তখনকার মানুষ কিভাবে মশার হাত থেকে রক্ষা পেতেন? একনজরে জেনে নিন মশা তাড়ানোর কার্যকরি ১৮টি উপায়-
১. লেবু ও লবঙ্গের ব্যবহার
লেবু খণ্ড করে কেটে ভেতরের অংশে অনেকগুলো লবঙ্গ গেঁথে দিন। লেবুর মধ্যে লবঙ্গের পুরোটা ঢুকাবেন শুধুমাত্র লবঙ্গের মাথার দিকের অংশ বাইরে থাকবে। এরপর লেবুর টুকরাগুলো একটি প্লেটে করে ঘরের কোণায় রেখে দিন। ব্যস, এতে বেশ কয়েকদিন মশার উপদ্রব থেকে মুক্ত থাকতে পারবেন। এই পদ্ধতিতে ঘরের মশা একেবারেই দূর হয়ে যাবে। আপনি চাইলে লেবুতে লবঙ্গ গেঁথে জানালার গ্রিলেও রাখতে পারেন। এতে করে মশা ঘরেই ঢুকবে না।
২. নিমের তেলের ব্যবহার
নিমের মশা তাড়ানোর বিশেষ একটি গুণ রয়েছে। নিমের তেল ত্বকের জন্যও বেশ ভালো। তাই একসাথে দুটি উপকার পেতে ব্যবহার করতে পারেন নিমের তেল। সমপরিমাণ নিমের তেল ও নারকেল তেল মিশিয়ে ত্বকে লাগিয়ে নিন। দেখবেন মশা আপনার ধারে কাছে ভিড়বে না এবং সেই সাথে ত্বকের অ্যালার্জি, ইনফেকশন জনিত নানা সমস্যাও দূর হবে।
৩. পুদিনার ব্যবহার
ছোট গ্লাসে একটু পানি নিয়ে তাতে ৫ থেকে ৬ গাছি পুদিনা রেখে দিন খাবার টেবিলে। ৩ দিন অন্তর পানি বদলে দেবেন। জার্নাল অফ বায়োরিসোর্স টেকনোলোজির গবেষণা মতে তুলসির মতো পুদিনা পাতারও রয়েছে মশা দূরে রাখার ক্ষমতা। শুধু মশাই নয় পুদিনার গন্ধ অনেক ধরণের পোকামাকড়কে ঘর থেকে দূরে রাখে। পুদিনা পাতা ছেঁচে নিয়ে পানিতে ফুটিয়ে নিন। এই পানির ভাপ পুরো ঘরে ছড়িয়ে দিন। দেখবেন ঘরের সব মশা পালিয়েছে। চাইলে পুদিনার তেলও গায়ে মাখতে পারেন।
৪. টবে লেমন গ্রাস লাগান
থাই লেমন গ্রাসে আছে ‘সাইট্রোনেলা অয়েল’ যা থেকে বের হয় একধরনের শক্তিশালী সুগন্ধ। এই সুগন্ধ কিন্তু মশাদের যম। মশারা এর কাছেও ঘেঁষে না। ফলে আপনার আশেপাশে লেমন গ্রাসের ঝাঁড় থাকলে মশারা আপনাকে খুঁজে পাবে না। আর লেমন গ্রাস দেখতেও কিন্তু মন্দ নয়। এমনসব স্থানে এসব গাছের টব রাখুন যেখানে সকাল বিকাল কিংবা রাতে পরিবারের অন্যদের নিয়ে কিংবা বন্ধু বান্ধব নিয়ে আড্ডা বা সময় কাটান। এভাবে থাকুন মশা মুক্ত।
৫. ধুনোর সঙ্গে নিশিন্দা ও নিমপাতার গুঁড়ো
প্রতিদিন নিশিন্দা ও নিমপাতার গুঁড়ো ধুনোর সঙ্গে ব্যবহার করলে মশার হাত থেকে রেহাই পাওয়া যায়।
৬. হলুদ বৈদ্যুতিক আলো
ঘরের মধ্যে মশার উৎপাত কমাতে চাইলে, ঘরের বৈদ্যুতিক আলোটি হলুদ সেলোফেনে জড়িয়ে দিন। ফলে হলুদ আলো হবে। দেখবেন মশা কমে গেছে, কারণ মশা হলুদ আলো থেকে দূরে থাকতে চায়। এছাড়া ঘরে এবং ঘরের বাইরে লাইট বাল্বগুলো পরিবর্তন করুন। মশারা সাধারণত সব লাইটের প্রতি আকৃষ্ট হয় না। এলইডি লাইট, হলুদ ‘বাগ লাইট’, বা সোডিয়াম লাইট এক্ষেত্রে উপকারী। এগুলো জ্বালালে সন্ধ্যাবেলা ঘরে বাইরে মশাদের আক্রমন অনেকটাই কমে যাবে।
৭. চা-পাতা পোড়ান
ব্যবহৃত চা-পাতা ফেলে না দিয়ে ভাল করে রোদে শুকিয়ে নিন। এইভাবে ওই চা পাতা ধুনোর বদলে ব্যবহার করুন। শুকনো চা পাতা পোড়ানো ধোঁয়ায় ঘরের সমস্ত মশা, মাছি পালিয়ে যাবে।
৮. নিমপাতা পোড়ান
কয়লা বা কাঠ-কয়লার আগুনে নিমপাতা পোড়ালে যে ধোঁয়া হবে তা মশা তাড়ানোর জন্য খুবই কার্যকর।
৯. ক্যাটনিপ অয়েল
ক্যাটনিপ অয়েলের nepetalactone নামক পদার্থ মশা তাড়াতে DEET (Diethyle-Meta-toluamide) থেকে প্রায় ১০ গুন বেশি শক্তিশালী। ক্যাটনিপ অয়েল মাখালে মশারা ধারে কাছেও ঘেঁষবে না।
১০. বারান্দায় চামচিকার বাক্স রাখুন
ভয় পাওয়ার কিছু নেই। চামচিকারারা এক ঘন্টায় কয়েকশত পোকা-মাকড় খায়। তাই মশা তাড়াতে ব্যাট হাউস বানাতে পারেন। বারান্দায় কিংবা ভেন্টিলেটরের কাছে রাখুন আর চামচিকাদের কাজ করতে দিন।
১১. ফ্যান চালু রাখুন
মশারা খুবই হালকা। অন্যদিকে একটি ফ্যানের স্পীড ঘন্টায় প্রায় দুই মাইল। মশাদের উড়বার গতিবেগের চাইতে ফ্যানের ঘুরবার গতি অনেক বেশি হওয়াতে সহজেই মশাদের ব্লেডের কাছে টেনে নেয়। আপনার বসার স্থান কিংবা ডেক বা যেসব স্থান থেকে মশারা খুব সহজে আপনার গৃহে প্রবেশ করতে পারে, এমনসব স্থানে মশাদের আগমন সময়ে আপনার টেবিল ফ্যান বা পেডাল ফ্যানটি চালু রাখুন। মশাদের হাত থেকেও যেমন নিস্কৃতি পাবেন তেমনি গরমেও পাবেন আরাম।
১২. কালো, নীল ও লাল কাপড় এড়িয়ে চলুন
মশাদের পছন্দের রঙের পোষাক এড়িয়ে চলুন। কি অবাক হচ্ছেন! হ্যাঁ কিছু কিছু প্রজাতির মশারা কয়েকটি গাঢ় রঙের প্রতি আকৃষ্ট হয় যেমন কালো, নীল আর লাল। আর তারা গরমের প্রতিও সংবেদনশীল। তাই ঠান্ডা রাখুন ঘর আর পোষাক পড়ুন হালকা রঙের।
১৩. কর্পূরের ব্যবহার
মশা কর্পূরের গন্ধ একেবারেই সহ্য করতে পারে না। আপনি যে কোন ফার্মেসিতে গিয়ে কর্পূরের ট্যাবলেট কিনে নিতে পারেন। একটি ৫০ গ্রামের কর্পূরের ট্যাবলেট একটি ছোট বাটিতে রেখে বাটিটি পানি দিয়ে পূর্ণ করুন। এরপর এটি ঘরের কোণে রেখে দিন। তাৎক্ষণিকভাবেই মশা গায়েব হয়ে যাবে। দুই দিন পর পানি পরিবর্তন করে নিন। আগের পানিটুকু ফেলে দিবেন না। এই পানি ঘর মোছার কাজে ব্যবহার করলে ঘরে পিঁপড়ের যন্ত্রণা থেকেও মুক্তি পাবেন।
১৪. সুগন্ধি ব্যবহার করুন
মশারা সুগন্ধি থেকে দূরে থাকে। সুতরাং রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে শরীরে আতর, সুগন্ধি, কিংবা লোসন মেখে শুতে পারেন। নিশ্চিত করে বলা যায় এতে মশা সাধারণ থেকে অনেক কম দেখা যাবে।
১৫. রসুনের স্প্রে করুন
রসুনের স্প্রে মশা তাড়াতে খুবই কার্যকারী প্রাকৃতিক উপায়। ৫ ভাগ পানিতে ১ ভাগ রসুনের রস মেশান। মিশ্রণটি একটি বোতলে ভরে শরীরের যেসব স্থানে মশারা কামড়াতে পারে সেসব স্থানে স্প্রে করুন। এতে করে যে কোন ধরণের রক্ত চোষারা আপনার ধারে কাছেও আসবে না।
১৬. জমানো জল থেকে দূরে থাকুন
খেয়াল রাখুন যেন কোথাও জল জমে না থাকে। ঘরের আনাচে-কানাচে কিংবা উঠোনে জল জমে থাকলে সেখানে মশারা বংশবিস্তার করতে পারে। তাই যেখানেই জল জমুক না কেন, তা সরিয়ে ফেলুন। মশার বংশবিস্তার রোধ করুন।
১৭. নারিকেলের আঁশ পোড়ান
নারিকেলের গায়ে থাকা আঁশের সাহায্য দূর করতে পারেন মশা। নারিকেলের আঁশ শুকিয়ে টুকরা করুন। একটি কাঠের পাত্রে রেখে জ্বলন্ত ম্যাচের কাঠি ধরুন। ৫-৬ মিনিটের মধ্যেই মশা দূর হবে।
১৮. কেরোসিন তেল স্প্রে
কেরোসিন তেল স্প্রে বোতলে নিন। কয়েক টুকরা কর্পূর মেশান। ভালো করে ঝাঁকিয়ে স্প্রে করুন রুমে। মশা থাকবে না।
ডেঙ্গু থেকে বাঁচতে করণীয়:-
জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত বাংলাদেশে বর্ষাকাল চলতে থাকে। তার মাঝে জুলাই থেকে টানা বৃষ্টি শুরু হয়। আর এ বৃষ্টির পানিতে এডিস মশার বংশবৃদ্ধি এবং আক্রমণও বৃদ্ধি পায়। আর তাতে মানুষ আক্রান্ত হতে থাকে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এডিস মশা প্রতি তিন দিন পর পর ডিম দেয় এবং একটি স্ত্রী মশা তার জীবদ্দশায় ১৫০টি থেকে ৩০০টি ডিম দিতে পারে। একটি ডিম প্রায় ১ বছর পর্যন্ত নিষিক্ত না হয়ে থাকতে পারে এবং প্রয়োজনীয় পানি পেলে যে কোনো সময় ডিম ফুটতে পারে। তাহলে বোঝা যাচ্ছে কতটা শক্তিশালী এ এডিস মশার জীবনচক্র এবং মানুষকে আক্রমণের তীব্রতা।
এডিস মশার আক্রমণে মানুষ যে রোগে আক্রান্ত হয় তা হলো ডেঙ্গুজ্বর। এটি মানুষের শক্তি, স্মৃতিশক্তি, কর্মক্ষমতা, খাদ্য গ্রহণ সবকিছু ধীরে ধীরে শেষ করে দেয়। যার ফলে মানুষ আক্রান্তের চেয়েও দুর্বল হয়ে পড়ে ও অসুস্থ বেশি হয়।
এ ডেঙ্গুজ্বরের কোনো স্থায়ী চিকিৎসা বা প্রতিষেধক না বের হওয়ার সবাইকে সচেতন হয়ে থাকতে হবে। সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই। সচেতনতাই পারে ডেঙ্গুজ্বর থেকে বাঁচাতে।
ডেঙ্গু সচেতনতায় করণীয়:-
- বাড়ির আঙিনার ঝোপঝাড় ও অতিরিক্ত পানি জমার জায়গা সব সময় পরিষ্কার রাখতে হবে। ঝোপঝাড়ে কখনো তিন দিনের বেশি পানি জমে থাকতে দেওয়া যাবে না।
- বাড়ি বা বসবাসের কোথাও অপ্রয়োজনীয় পানি জমতে দেওয়া যাবে না। জমা পানিতে এডিস মশার বংশবৃদ্ধি দ্রুত হয়।
- এডিস মশা যেহেতু দিনে বেশি কামড়ায়, তাই দিনেরবেলা ঘুমালে মশারি টাঙিয়ে ঘুমাতে হবে।
ঘরের চারদিকের জানালায় নেট লাগাতে হবে।
- যেসব শিক্ষার্থী স্কুলে পড়াশোনা করতে যায় তাদের সব সময় ফুলপ্যান্ট এবং শার্ট পরিয়ে পাঠাতে হবে।
- বাড়ির ঝোপঝাড়ের পাশাপাশি বাসার বারান্দাও পরিষ্কার রাখতে হবে। বারান্দায় যদি অপরিষ্কার বা পানি জমে যায় তাহলে লার্ভিসাইড স্প্রে মেরে পরিষ্কার করতে হবে।
- বাড়ির ছাদের পরিষ্কারের দিকে বেশি নজর রাখতে হবে। সেখানে ছাদের কোণে অনেক সময় অপরিষ্কার এবং অব্যবহৃত অনেক কিছু পড়ে থাকে। সেগুলোতে তিন দিনের অধিক পানি জমে থাকতে পারে পাশাপাশি দুর্গন্ধযুক্ত কোনো পদার্থের সৃষ্টি হতে পারে। যা কিনা এডিস মশার বংশবৃদ্ধির জন্য সহায়ক হয়। এজন্য মশা নিরধক স্প্রে করতে হবে ছাদের কোণে এবং ছাদে অপ্রয়োজনীয় বা অপরিষ্কার বা পচা জিনিসপত্র থাকলে সেগুলো সরিয়ে ফেলতে হবে। কোনোভাবে পানিজাতীয় কিছু যার মাধ্যমে এডিস মশা বিস্তার ঘটতে পারে তা সরিয়ে ফেলতে হবে।
- আবার যেখানে স্বচ্ছ পানি জমে থাকতে পারে, সেসব যেমন ফুলদানি, অব্যবহৃত কৌটা, ডাবের খোসা, পরিত্যক্ত টায়ার ইত্যাদি সরিয়ে ফেলতে হবে। মশা নিধনের স্প্রে, কয়েল, ম্যাট ব্যবহারের সঙ্গে সঙ্গে দিনে ও রাতে মশারি ব্যবহার করতে হবে।
- বারান্দা বা ছাদে গাছের বা ফুল-ফলের টবে বা প্লাস্টিকের পলিথিনে যেন পানি না জমে থাকতে পারে সেদিকেও লক্ষ রাখতে হবে।
- অব্যবহৃত পানির পাত্র ধ্বংস অথবা উলটিয়ে রাখতে হবে, যেন পানি না জমে।
- অব্যবহৃত হাইকমোডে হারপিক ঢেলে ঢাকনা বন্ধ করে রাখতে হবে।
- এছাড়া লো-কমোডের প্যানে হারপিক ঢেলে বস্তা দিয়ে মুখ বন্ধ করে রাখতে হবে।
- বাড়ির আশপাশে কোনো বদ্ধ জলাশয় রাখা যাবে না। বদ্ধ জলাশয় থাকলেও তাতে মশা নিরোধক স্প্রে করে রাখতে হবে।
- বাসার মধ্যে স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ দূর করতে হবে।
- মশা মারার ব্যাট রাখুন।
- নিজেদের চলাচল জায়গায় বা শয়ন ঘরের পাশে কোনো পচা আবর্জনা স্তূপ রাখা যাবে না।
- বাসার মধ্যে অন্ধকার পরিবেশ দূর করতে হবে। আলো বাতাসের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
- ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তিকে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে।
ডেঙ্গু মশা চেনার উপায়:-
অনেকেই জানতে চান, ‘ডেঙ্গু মশা’ দেখতে কেমন? কীটতত্ত্ববিদ কবিরুল বাশার বলেছেন, ডেঙ্গুর জীবাণু বহনকারী এডিস মশা খালি চোখে দেখেও শনাক্ত করা সম্ভব। তিনি জানান, মশাটি মাঝারি আকারের হয়ে থাকে এবং এর গায়ে-পায়ে সাদা কালো ডোরাকাটা দাগ থাকে। তবে আর্মিগিয়ার নামে একটি মশার পেটেও একই ধরণের ডোরাকাটা দাগ রয়েছে।
ডেঙ্গু হলে কী করবেন, কী কী করবেন না:-
ডেঙ্গুর প্রধান লক্ষণ—জ্বর। ৯৯ থেকে ১০৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত তাপমাত্রা উঠতে পারে। জ্বর টানা থাকতে পারে, আবার ঘাম দিয়ে জ্বর ছেড়ে দেওয়ার পর আবারও আসতে পারে। এর সঙ্গে শরীরে ব্যথা, মাথাব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা এবং চামড়ায় লালচে দাগ বা ফুসকুড়ি দেখা যায়।
কখন হাসপাতালে যেতে হয়:-
ডেঙ্গু হলে কী ধরনের চিকিৎসা নেবেন, বাসায় না হাসপাতালে থাকবেন—নির্ভর করে এর ধরন বা ক্যাটাগরির ওপর। ডেঙ্গু জ্বরের তিনটি ধরন বা ক্যাটাগরি আছে—‘এ’, ‘বি’ ও ‘সি’। প্রথম ক্যাটাগরির রোগীরা স্বাভাবিক থাকে। তাদের শুধু জ্বর থাকে। অধিকাংশ ডেঙ্গু রোগী ‘এ’ ক্যাটাগরির। তাদের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। বাড়িতে বিশ্রাম নেওয়াই যথেষ্ট।
‘বি’ ক্যাটাগরির ডেঙ্গু রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি হওয়া লাগতে পারে। কিছু লক্ষণ, যেমন পেটে ব্যথা, বমি, ডায়াবেটিস, স্থূলতা, অন্তঃসত্ত্বা, জন্মগত সমস্যা, কিডনি বা লিভারের সমস্যা থাকলে হাসপাতালে ভর্তি হওয়াই ভালো।
‘সি’ ক্যাটাগরির ডেঙ্গু জ্বর সবচেয়ে খারাপ। এতে লিভার, কিডনি, মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র বা আইসিইউর প্রয়োজন হতে পারে।
বাড়িতে কী করবেন:-
পরিপূর্ণ বিশ্রামে থাকতে হবে।
প্রচুর তরলজাতীয় খাবার গ্রহণ করতে হবে। ডাবের পানি, লেবুর শরবত, ফলের জুস এবং খাবার স্যালাইন পান করুন একটু পরপর।
ডেঙ্গু জ্বর হলে প্যারাসিটামল খাওয়া যাবে। স্বাভাবিক ওজনের একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি প্রতিদিন সর্বোচ্চ আটটি প্যারাসিটামল খেতে পারবে। কিন্তু কোনো ব্যক্তির যদি লিভার, হার্ট এবং কিডনি–সংক্রান্ত জটিলতা থাকে, তাহলে প্যারাসিটামল সেবনের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে গায়ে ব্যথার জন্য অ্যাসপিরিন, ক্লোফেনাক, আইবুপ্রোফেন–জাতীয় ওষুধ খাওয়া যাবে না। ডেঙ্গুর সময় এ–জাতীয় ওষুধ গ্রহণ করলে রক্তক্ষরণ হতে পারে।
ডেঙ্গু জ্বরের ক্ষেত্রে প্লাটিলেট এখন আর মূল বিষয় নয়। প্লাটিলেট হিসাব নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই।
প্লাটিলেট কাউন্ট ১০ হাজারের নিচে নামলে বা শরীরের কোনো জায়গা থেকে রক্তপাত হলে প্রয়োজন বোধে প্লাটিলেট বা ফ্রেশ রক্ত দেওয়া যেতে পারে। এ ধরনের পরিস্থিতি খুবই কম দেখা যায়।
অনেকে বলেন, পেঁপেপাতার জুস ইত্যাদি খেলে প্লাটিলেট বাড়ে। আসলে এসবের কোনো ভূমিকা নেই। জ্বর কমে যাওয়ার পর সংকটকাল পেরিয়ে গেলে আপনা থেকেই প্লাটিলেট বাড়তে শুরু করে।
জ্বরের শেষের দিকে রক্তচাপ কমে যেতে পারে অথবা মাড়ি, নাক, মলদ্বার দিয়ে রক্তপাত হতে পারে। এ রকম হলে প্রয়োজনে শিরাপথে স্যালাইন দেওয়া লাগতে পারে। এসব ক্ষেত্রে তাই হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে।
ডা. আফসানা বেগম: সিনিয়র কনসালট্যান্ট, ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগ, ইউনাইটেড হাসপাতাল, ঢাকা